মোঃ মুক্তার হোসেন (রাজশাহী) ।।
এবার বর্ষা মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক পাট চাষী পড়েন বিপাকে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের ঘোষণা মোতাবেক লিজবিহীন জলাশয়গুলোতে চাষিরা পাটজাগ দিতে ব্যাপকভাবে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। এসব জলাশয়ে পাটজাগ দিতে চাষিদের ব্যস্ত সময় পার করতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এছাড়াও ইতোমধ্যে গত দুই দিনে বৃষ্টিপাতের ফলে খাল-বিল ও নদী-নালায় কিছুটা পানি জমতে শুরু করেছে। শ্রাবণের স্বরূপ বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে, পাট জাগ দেয়া চাষিদের জন্য আর কোনো সমস্যা হবে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পবা উপজেলার ডাংগেরহাট সুইচ গেটের খাস জলাশয়, দর্শনপাড়া ইউনিয়নের বিল ধর্মপুর এলাকার খাল-বিল, নওহাটা পৌর এলাকার দুয়ারি বারনই নদীর সুইচ গেটের খাস জলাশয়, ভূগরইল খাড়ি, বড়গাছী বিলে পার্শ্ববর্তী লিজবিহীন খাস পুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার লিজবিহীন খাস পুকুর, খাল-বিল ও নদী-নালায় সোনালী আঁশ খ্যাত পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আষাঢ় মাসে সময় মত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দেয়া নিয়ে হতাশায় ছিলেন কৃষকেরা। পাট চাষিদের কষ্টের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল মাসিক সমন্বয় সভায় রাজশাহী অঞ্চলে লিজবিহীন খাস পুকুরসহ সরকারি জলাশয়গুলোতে পাটজাগ দেয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তের আলোকে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার পাটচাষিরা সরকারি খাস জলাশয়ে পাট জাগ দেয়ার সুযোগ লাভ করেছে।
এতে চাষিরা সুফলও পাচ্ছেন। পানির কিছুটা অভাব হলেও চাষিরা লিজবিহীন জলাশয়গুলোতে জাগ দেয়া পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পবা উপজেলার এক পাটচাষি জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি কিন্তু অতিরিক্ত খরায় পানির অভাবে পাটজাগ দেয়া নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। এলাকায় পাট জাগ দেয়ার জায়গার ভীষণ সংকট থাকলেও বিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি খাস পুকুর ও ডোবা আছে, সেখানে পানি থাকে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এই খাস পুকুরে পাট জাগ দিয়েছি। সোমবার থেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো শুরু করেছি। এখানে পাট জাগ দিতে না পারলে আমাকে মাঠ থেকে ১০ মাইল দূরে বারনই নদীতে পাট নিয়ে যেতে হতো। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি পড়তো।
পবা উপজেলার ডাংগেরহাট এলাকার পাট চাষি জানান, মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এবছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। ডিসি স্যারের ঘোষণা শোনার পর এক বিঘা জমির পাট রাস্তার পাশে সরকারি ডোবাতে জাগ দিয়েছি। আর বাকি পাট সরকারি খাস জলাশয় ডাংগেরহাট সুইচ গেটের নিচে জাগ দিয়েছি। এখন নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে, পাট ঘরে তুলতে আর কোনো সমস্যা হবে না।
এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা অভ্যাসগতভাবে স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই পাট জাগ দিয়ে থাকেন। পাট জাগ দেয়ার জন্য এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় আছে। রাজশাহী অঞ্চলে অনেক খাস পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ও খাড়ি আছে, সেগুলো পাট জাগ দেয়ার জন্য কৃষকরা ব্যবহার করছেন। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের ফলে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে পাট পচনে কৃষকদের কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।
Leave a Reply