মোঃ মুক্তার হোসেন (রাজশাহী) ।।
১৫ই আগস্ট বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে একটি কলংকজনক অধ্যায়। এদিন ভোরে দেশী, বিদেশী কুচক্রী মহলের ইন্ধনে সর্বকালের সেরা বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর লাশের উপর ক্ষমতায় বসেন খন্দকার মোশতাক গং। পরবর্তীতে দৃশ্যপটে আসেন জেনারেল জিয়া।
সারাদেশের মত রাজশাহীতেও যথাযোগ্য বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রাজশাহীর বিভিন্ন সরকারি দফতরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ,
কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (১৫ আগস্ট) সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি।
আলোচনা সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সকল শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মো আব্দুল বাতেন, আরএমপি’র পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, এমসিএ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রাক্তন মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল হাদী।
এর আগে সকাল ৯টায় রাষ্ট্রের পক্ষে বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ্ এনডিসি এর নেতৃত্বে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে নগরীর সিআরবি মোড় বঙ্গবন্ধু চত্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে একটি শোক র্যালী নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এসে শেষ হয়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা, কারাগারে জাতীয় চারনেতা হত্যাকাণ্ড, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সবই এক সূত্রে গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্যই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর, তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশে উন্নয়নের মহাসড়কে পদার্পণ করেছে এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। তাঁর হাত ধরেই গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
উপস্থিত বক্তারা বলেন- হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু একজন রাজনৈতিক নেতাই ছিলেন না, তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন সকল গুণের অধিকারী।
বঙ্গবন্ধু আপদমস্তক একজন বাঙালী ছিলেন, বাঙালী জাতির মুক্তির ত্রাতা হিসেবে তিনি বাংলার মাটিতে জন্মেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন ও মুক্তি ছাড়া তাঁর অন্য কোন ভাবনা ছিলোনা।
বক্তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি এবং অবিসংবাদিত জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর মতো জাতীয়তাবাদী নেতা সমসাময়িক বিশ্বে ছিল বিরল। তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছেন, বাঙালীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন। আমরা কথা ও পোষাকে নয় কাজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো।
এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. জিয়াউল হক, স্থানীয় সরকার পরিচালক মো. এনামুল হক, উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) শাহানা আখতার জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী সহ রাজশাহী জেলার বিভিন্ন দফতরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা-কর্মচারীবৃন্দ।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাদ জোহর কালেক্টরেট জামে মসজিদে ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত, দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচিতে জেলা প্রশাসনে কর্মরত সকলে অংশগ্রহণ করেন।
Leave a Reply