কে এম আবুল কাশেম বাহাদুর (চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান) ।।
‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই স্লোগান নিয়ে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জোড়ালো ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব সৃষ্টিকাল থেকে সমাজের বিভিন্ন অপরাধ এর উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতারসহ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম অস্ত্রধারী সস্ত্রাসী, ডাকাত, ধর্ষক, দুর্ধষ চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও প্রতারকদের গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদক উদ্ধারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করায় সাধারণ জনগনের মনে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট ২০২২ইং তারিখ দুপুর ১ঃ২০ মিনিটে জাতীয় পার্টির সদ্যপ্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার ছেলে মাইনুল ইসলাম(২৯) পিস্তল দিয়ে গুলি করে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই ভিকটিম লুটিয়ে পড়লে তার মেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের মেয়ে বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-২২ তারিখঃ ১৭ আগস্ট ২০২২। উক্ত ঘটনাটি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম হত্যাকান্ডে জড়িতকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মাঈনুদ্দিন কেরানীরহাট হতে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি পরিবহনযোগে রওনা হয়। এরুপ তথ্যের ভিত্তিতে গত (১৭ আগস্ট ২০২২ ইং) তারিখে ৫ঃ৩৫ ঘ মিনিটে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি দূধর্ষ আভিযানিক দল পথিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার নতুন ব্রীজ এলাকা হতে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মাঈনুদ্দিন মোঃ মাঈনু, পিতা-মৃত শামসুল আলম মাষ্টার, গ্রাম-সবজার পাড়া, থানা-পটিয়া, জেলা-চট্টগ্রাম’কে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে ধৃত আসামী মঈনুলের নিজ মুখের স্বীকারোক্তি ও তার দেখানো মতে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন রসুলপুর এলাকার একটি গুদামঘর হতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি সংরক্ষিত অবস্থায় উদ্ধারসহ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মাঈনুদ্দিন স্বীকার কওে যে, উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি দিয়ে সে তার মাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, নিহত ভিকটিম জেসমিন পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী। গত (১৩ জুলাই ২০২২ ইং) তারিখে শামসুল আলম মাস্টার বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু বরণ করেন। তার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। মৃত্যুকালে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি রেখে যান। শামসুল আলমের ছোট ছেলে এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। গত ঈদ-উল ফিতর এর সময় তারা দেশে আসেন। শামসুল আলম এর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে ও মেয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। শামসুল আলমের বড় ছেলে মাঈনুলের উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব ছিল। নিহত জেসমিনের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত তার মেয়ের কাছে যাওয়ার কথা ছিল। মাঈনুল অভিযোগ করে আসছিল মা তার দুই ছেলেকে বঞ্চিত করে মেয়েকে সব সম্পত্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক ভাবে একাধিক বার বৈঠকও হয়। সম্পত্তি নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। মাইনুলের সন্দেহ ছিলো মা সব সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে চাচ্ছেন। এই প্রেক্ষিতে গত (১৬ আগস্ট ২০২২ ইং) তারিখে ঝগড়ার একপর্যায়ে মাইনুল তার মা জেসমিন আকতারকে গুলি করে হত্যা করে।
Leave a Reply