মোঃ মুক্তার হোসেন (রাজশাহী) ।।
সম্প্রতি পেট্রোল, ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহত্তর রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের সেচ কার্য্য পরিচালনায় গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। কারণ সেচ কাজে ডিজেল ব্যাবহৃত হয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।তাই কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমনের ভরা মৌসুমে সারের দাম বাড়ানোর পর বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের দাম। একের পর এক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে বৃহত্তর রাজশাহী তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।
এমনিতে এ বছর স্বাভাবিক সময়ে হয়নি কোন বৃষ্টিপাত। আমন ধান রোপনের জন্য এ অবস্থায় অতিরিক্ত দামে ডিজেল কিনে দিতে হচ্ছে সেচ। এতে কোনোভাবেই লোকসান কাটানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষকেরা। কারণ উৎপাদন খরচ ও পরিবহন খরচ দুটোই বাড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডিজেলের মোট চাহিদার বড় একটি অংশ কৃষি ফসল উৎপাদন ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। তেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানোর কারণে কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে প্রায় ২৫/৩০ শতাংশ।
জানা গেছে, গত (১ আগস্ট) কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরামুল্য প্রতি কেজি ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুণনির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর ৬ আগষ্ট শুক্রবার রাতে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা করে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করা হয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিজেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধির পর আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে খরচ হবে ৭-৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইউরিয়া সারে ৩০ কেজি ৬৬০-৬৮০, পটাশ ১০ কেজি ২৮০, ফসফেট ১৫ কেজি ৪২০, জিপসামে ১০ কেজি ২২০ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক, হালচাষ ও রোপণ করতে আরো ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং সেচ বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। বিগত মৌসুমগুলোতে এক বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, এবার সার, হালচাষ ও সেচ খরচে কৃষকদের অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার টাকা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর অবশেষে সেচ দিয়েই চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকেরা। কেউ জমি প্রস্তুত করতে হালচাষ দিচ্ছেন। কেউবা জমিতে শ্যালো ইঞ্জিনে দিয়ে সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আবার কেউ কেউ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে জমিতে চারা রোপণ করেছেন।
কৃষকেরা জানান, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমিতে হালচাষ ও সেচ খরচ বেড়ে গেছে। বিগত সময়ে এক বিঘা জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে এক চাষ করা হতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। ডিজেলের দাম বাড়ার পরদিন থেকেই এক বিঘা জমি চাষ করতে ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার মালিকেরা নিচ্ছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দুই গুণ বেড়েছে ধান উৎপাদনের ব্যয়। একজন কৃষক বলেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বিঘায় সেচ খরচ ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেড়েছে এবং হালচাষে খরচ বাড়ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
Leave a Reply